হযরত ফাতেমার মৃত্যু নিয়ে শিয়াদের ভিত্তিহীন ধারণার উপযুক্ত জবাব
(তিনদিন সময় ব্যয় করে রচিত এ তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটি সময় নিয়ে পড়ুন৷ অনেক অজানা বিষয় জানা যাবে)
শিয়া বা রাফেজী নামের প্রাচীন মুসলিম গোষ্ঠীটির মধ্যে কিছু ভালো লোক থাকলেও বর্তমানে তাদের অধিকাংশই উগ্র ও পক্ষপাতদুষ্ট। তবে সুন্নীদের মাঝেও কিছু উগ্র ও পক্ষপাতদুষ্ট লোক রয়েছে। আর শিয়ারা উগ্র হলেও খারেজীদের মত খুনী নয়। খারেজীদের ব্যাপারে প্রচুর হাদীছ থাকলেও শিয়া বা রাফেজীদের দুর্নাম সম্বলিত পৃথক কোন ছহীহ হাদীছ নেই। তবে সুনানে তিরমিযীতে (২২২০) রাফেজী চিন্তার পুরোধা ব্যক্তিত্ব মুখতার আছ-ছাকাফীর আহলে বাইত প্রেমে মিথ্যুক হওয়ার ব্যাপারে একটি হাদীছ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “ছাকীফ গোত্রে একজন মহা মিথ্যুক ও একজন বড় খুনী كذاب ومُبير সৃষ্টি হবে।” আলেমদের মতে এ হাদীছে মহা মিথ্যুক দ্বারা মুখতার আছ-ছাকাফীকে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং বড় খুনী দ্বারা বনু উমাইয়ার ইরাকী গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আছ-ছাকাফীকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। মুখতার এজিদ বিরোধী ছিল বটে। কিন্তু তার নিয়ত ঠিক ছিল না। সেও ক্ষমতালোভী ছিল। আহলে বাইতের প্রতি তার পক্ষপাত ছিল উদ্দেশ্য প্রণোদিত। যাই হোক, এ প্রবন্ধে আমি শিয়াদের নিয়ে বিস্তারিত লিখছি না (শিয়াদের ঈমান-আমলের ভুল-শুদ্ধ নিয়ে পরে লিখবো)। শুধু এটুকুই বলবো, আহলে বাইতের প্রতি এজিদের বংশ তথা নাছেবীদের জুলুমের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শিয়াদের অনেকে জেনে এবং অনেকে না জেনে হযরত আবু বকর ও উমরের প্রতি যে ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করে, তা সুস্পষ্ট অন্যায় এবং মধ্যপন্থা থেকে বিচ্যুত হয়ে উগ্রতায় দীক্ষিত হওয়া। উগ্র ও দাম্ভিক শিয়াদের জানা উচিত, সুন্নী ফিকাহের ইমাম আযম হযরত আবু হানীফা নবীপৌত্র ইমাম জাইদ বিন আলীর সমর্থক ছিলেন। একইভাবে তিনি ও ইমাম মালিকসহ ওই সময়ের হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ আব্বাসী শাসক আবু জাফর মনছুরের হাতে নিহত নবীপৌত্র ইমাম মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ নফসে জকিয়াকে সমর্থন করতেন। ইমাম আবু হানীফা নফসে জকিয়ার খুনী আবু জাফরের বিচারকের পদ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করায় তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে হত্যা করেছিল জালিম আবু জাফর। ইমাম নাসাঈ হযরত আলীর ফযীলত নিয়ে الخصائص গ্রন্থ লেখায় এবং আমীর মোয়াবিয়ার পক্ষে কিতাব লিখতে অস্বীকার করায় নাছেবীদের হাতে আহত হয়ে শাহাদত বরণ করেছিলেন। আহলে বাইতের প্রতি নাছেবী ও উগ্র সালাফীদের অভক্তি ও অশ্রদ্ধার দায় আহলুস সুন্নাহ্র নয়। প্রকৃত আহলুস সুন্নাহ বলতে সকলে আহলে বাইতের প্রতি যথেষ্ট ভক্তি ও শ্রদ্ধা পোষণ করেন। আমি নিজেও একজন সুন্নী। আমি নিজেও হযরত আলী, ফাতেমা ও হাসান-হুসাইনের প্রতি যথেষ্ট ভক্তি ও শ্রদ্ধা পোষণ করি এবং এজিদসহ সকল ধরণের নাছেবীদের ঘৃণা করি।
অনির্ভরযোগ্য ইতিহাসগ্রন্থের সূত্র ধরে শিয়াদের অনেকে বিশ্বাস করে থাকে যে, হযরত আবু বকরকে বাইয়াত না দিয়ে হযরত আলী, হযরত আব্বাস, হযরত জুবাইর ও হযরত তালহা প্রমুখ হযরত আলীর ঘরে বৈঠক করায় হযরত উমর সেখানে যান এবং তর্কের এক পর্যায়ে হযরত উমর নবীকন্যা ফাতেমাকে ধাক্কা মেরে আহত করেন এবং এর ফলে তার পেটের বাচ্চা নষ্ট হয় ও তিনি মারা যান। একইভাবে তারা হযরত আবু বকরকেও আহলে বাইতের প্রতি জুলুমকারী বলে অভিহিত করে। এ ক্ষেত্রে তারা যে দুইটি হাদীছ দলীল হিসেবে পেশ করে, তা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। এগুলো দ্বারা অকাট্যভাবে দূরে থাক, সাধারণভাবেও এটি প্রমাণিত হয় না যে, হযরত আবু বকর ও হযরত উমরসহ ছাহাবা কেরাম হযরত আলী ও ফাতেমার প্রতি জুলুম করেছেন। এতে উভয় পক্ষের ভুল বুঝাবুঝির কথা উল্লেখ থাকলেও পরে তা দূর হয়ে যাবার কথাও বর্ণিত হয়েছে। হযরত উমর তাঁর স্বভাব অনুযায়ী প্রথমে হযরত আলী, হযরত যুবাইর, হযরত তলহা ও হযরত আব্বাসসহ অনেকের প্রতি খুব ক্ষোভ দেখালেও পরে তিনি নরম হয়ে যান। তারা হযরত আলীর ঘরে বৈঠক করায় তাদেরসহ ওই ঘর পুড়ে দেবার হুমকির যে বর্ণনা রয়েছে, তা যদি সত্যও হয়, তাহলে এতে হযরত উমরকে মন্দ বলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, যে কোনো বিরোধের সময় মানুষ রাগবশত এমর অনেক কথা বলেন, যা বাস্তবায়ন করা হয় না বা যায় না। ইসলামী এবং সাধারণ আইনেও এ ধরণের হুমকিকে অপরাধের মধ্যে গণ্য করা যায় না। বিশেষত ওই হুমকিদতা যদি হুমকিপ্রাপ্তের সমকক্ষ ও নেতৃস্থানীয় কেউ হন।
এবার আসি উভয় পক্ষের বিরোধের কারণ ও তার সুন্দর সমাপ্তির বর্ণনায়। এর আগে বলে রাখা ভালো, সাইয়িদুনা হযরত মুহাম্মদ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ খাইবারخيبر (মদীনা মুনাওয়ারা থেকে প্রায় ১০০ মাইল উত্তরে অবস্থিত একটি সাবেক ইহুদী অঞ্চল) বিজয়ের পর পার্শ্ববর্তী আরেক ইহুদী অঞ্চল ফাদাকেরفدك লোকেরা বিনাযুদ্ধে নবীজি صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এর কাছে এসে আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের উৎপাদিত শস্য-দানার অর্ধেকের বিনিময়ে তাঁঁর সাথে সমঝোতা করে। কোরআন শরীফে যুদ্ধেপ্রাপ্ত সম্পদকে গনীমত غنيمة ও বিনাযুদ্ধে পাওয়া সম্পদকে ফাই الفيء বলা হয়েছে। কোরআন শরীফে বর্ণিত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার নির্দেশ অনুযায়ী গনীমতের এক পঞ্চমাংশ এবং ফাইয়ের পুরোটাই নবীজি صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এর জন্য বরাদ্দ ছিল (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নবীজি صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এর নিয়ম ছিল, ওনার কাছে নগদ সম্পদ যাই আসতো, তার সবই তিনদিনের মধ্যে পরিবার ও মানুষের মাঝে বণ্টন করে দিতেন। যে কারণে সারা বছরই ওনার সংসারে অভাব-অনটন লেগে থাকতো। অভাব-অনটন আমাদের মত দুর্বলমনাদের জন্য লজ্জা ও কষ্টের বিষয় হলেও নবীজির জন্য তা ছিল গৌরব ও স্বস্তির বিষয়)। তো নবীজি صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এর কাছে ফাদাক থেকে প্রতিবছর অর্ধেক শস্য আসতো। কারণ, ফাদাকের পুরো ভূমির মালিক ছিলেন তিনি। যারা সেখানে চাষ করতো, তারা ফসলের অর্ধেক নবীজির صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ কাছে চুক্তিমত পাঠিয়ে দিতেন। অন্যদিকে হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত তথ্যমতে খাইবারে গনীমতের যে ভাগ পেয়েছিলেন, তার কিছু অংশও নবীজির صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ইন্তেকালের সময় থেকে গিয়েছিল। তাছাড়া মদীনাতেও নাকি নবীজির صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ কিছু ফাই (বিনাযুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ) ছিল। তো নবীজির صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ইন্তেকালের পর হযরত ফাতেমা তাঁর স্বামী হযরত আলীকে رضي الله عنهما নিয়ে হযরত আবু বকরের কাছে পিতা নবীজির صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ রেখে যাওয়া মীরাছের অংশ দাবি করলেন। একইভাবে হযরত আব্বাসও ভাতিজার মীরাছ চাইলেন (মৃত কারো ছেলে না থাকলে চাচাও তাঁর মীরাছের অংশ পায়)। তখন হযরত আবু বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি , لَا نُورَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ “আমরা নবীগণ কাউকে সম্পদের উত্তরাধিকারী করি না। আমরা যা রেখে যাই, তা উম্মতের জন্য দান صدقة হিসেবে রেখে যাই।” তখন হযরত ফাতেমা, হযরত আলী ও হযরত আব্বাস অসন্তুষ্ট হলেন। আর এর কারণ ছিল, ওই হাদীছটা তারা ইতিপূর্বে শুনেননি। পরে অবশ্য উভয় পক্ষের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়। নীচে এ ঘটনা প্রসঙ্গে ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত দুইটি হাদীছের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْسَلَتْ إِلَى أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ تَسْأَلُهُ مِيرَاثَهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْهِ بِالْمَدِينَةِ وَفَدَكٍ وَمَا بَقِيَ مِنْ خُمْسِ خَيْبَرَ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا نُورَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ إِنَّمَا يَأْكُلُ آلُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هَذَا الْمَالِ وَإِنِّي وَاللَّهِ لَا أُغَيِّرُ شَيْئًا مِنْ صَدَقَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ حَالِهَا الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهَا فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَأَعْمَلَنَّ فِيهَا بِمَا عَمِلَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَبَى أَبُو بَكْرٍ أَنْ يَدْفَعَ إِلَى فَاطِمَةَ شَيْئًا فَوَجَدَتْ فَاطِمَةُ عَلَى أَبِي بَكْرٍ فِي ذَلِكَ قَالَ فَهَجَرَتْهُ فَلَمْ تُكَلِّمْهُ حَتَّى تُوُفِّيَتْ وَعَاشَتْ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِتَّةَ أَشْهُرٍ فَلَمَّا تُوُفِّيَتْ دَفَنَهَا زَوْجُهَا عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ لَيْلًا وَلَمْ يُؤْذِنْ بِهَا أَبَا بَكْرٍ وَصَلَّى عَلَيْهَا عَلِيٌّ وَكَانَ لِعَلِيٍّ مِنْ النَّاسِ وِجْهَةٌ حَيَاةَ فَاطِمَةَ فَلَمَّا تُوُفِّيَتْ اسْتَنْكَرَ عَلِيٌّ وُجُوهَ النَّاسِ فَالْتَمَسَ مُصَالَحَةَ أَبِي بَكْرٍ وَمُبَايَعَتَهُ وَلَمْ يَكُنْ بَايَعَ تِلْكَ الْأَشْهُرَ فَأَرْسَلَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ أَنْ ائْتِنَا وَلَا يَأْتِنَا مَعَكَ أَحَدٌ كَرَاهِيَةَ مَحْضَرِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَقَالَ عُمَرُ لِأَبِي بَكْرٍ وَاللَّهِ لَا تَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَحْدَكَ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ وَمَا عَسَاهُمْ أَنْ يَفْعَلُوا بِي إِنِّي وَاللَّهِ لَآتِيَنَّهُمْ فَدَخَلَ عَلَيْهِمْ أَبُو بَكْرٍ فَتَشَهَّدَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ ثُمَّ قَالَ إِنَّا قَدْ عَرَفْنَا يَا أَبَا بَكْرٍ فَضِيلَتَكَ وَمَا أَعْطَاكَ اللَّهُ وَلَمْ نَنْفَسْ عَلَيْكَ خَيْرًا سَاقَهُ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلَكِنَّكَ اسْتَبْدَدْتَ عَلَيْنَا بِالْأَمْرِ وَكُنَّا نَحْنُ نَرَى لَنَا حَقًّا لِقَرَابَتِنَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يَزَلْ يُكَلِّمُ أَبَا بَكْرٍ حَتَّى فَاضَتْ عَيْنَا أَبِي بَكْرٍ فَلَمَّا تَكَلَّمَ أَبُو بَكْرٍ قَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَرَابَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ أَصِلَ مِنْ قَرَابَتِي وَأَمَّا الَّذِي شَجَرَ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ مِنْ هَذِهِ الْأَمْوَالِ فَإِنِّي لَمْ آلُ فِيهَا عَنْ الْحَقِّ وَلَمْ أَتْرُكْ أَمْرًا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُهُ فِيهَا إِلَّا صَنَعْتُهُ فَقَالَ عَلِيٌّ لِأَبِي بَكْرٍ مَوْعِدُكَ الْعَشِيَّةُ لِلْبَيْعَةِ فَلَمَّا صَلَّى أَبُو بَكْرٍ صَلَاةَ الظُّهْرِ رَقِيَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَتَشَهَّدَ وَذَكَرَ شَأْنَ عَلِيٍّ وَتَخَلُّفَهُ عَنْ الْبَيْعَةِ وَعُذْرَهُ بِالَّذِي اعْتَذَرَ إِلَيْهِ ثُمَّ اسْتَغْفَرَ وَتَشَهَّدَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ فَعَظَّمَ حَقَّ أَبِي بَكْرٍ وَأَنَّهُ لَمْ يَحْمِلْهُ عَلَى الَّذِي صَنَعَ نَفَاسَةً عَلَى أَبِي بَكْرٍ وَلَا إِنْكَارًا لِلَّذِي فَضَّلَهُ اللَّهُ بِهِ وَلَكِنَّا كُنَّا نَرَى لَنَا فِي الْأَمْرِ نَصِيبًا فَاسْتبدَّ عَلَيْنَا بِهِ فَوَجَدْنَا فِي أَنْفُسِنَا فَسُرَّ بِذَلِكَ الْمُسْلِمُونَ وَقَالُوا أَصَبْتَ فَكَانَ الْمُسْلِمُونَ إِلَى عَلِيٍّ قَرِيبًا حِينَ رَاجَعَ الْأَمْرَ الْمَعْرُوفَ. أخرجه البخارى (6/2475 ، رقم 6349) ، ومسلم (3/1379 ، رقم 1758) ، ومالك (2/993 ، رقم 1802) ، وأحمد (6/145 ، رقم 25168).
অর্থ: হযরত উরওয়া থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন হযরত আয়েশা (রদিয়াল্লাহু আনহা) তাকে জানিয়েছেন যে, হযরত ফাতেমা বিনত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকরের নিকট রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সম্পদ থেকে তার প্রাপ্য মীরাছের দাবী করে লোক পাঠালেন। তা ছিল ওই সম্পদ যা আল্লাহ তা’আলা তাঁকে মদীনা ও ফাদাকে ফাই হিসেবে দিয়েছিলেন এবং যা খাইবারের গনীমতের এক পঞ্চমাংশ থেকে অবশিষ্ট থেকে গিয়েছিল। তখন আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গিয়েছেন, “আমরা (নাবীগণ) কাউকে সম্পদের উত্তরাধীকারী বানাই না। আমরা যা রেখে যাই, তা হবে (আল্লাহর পথে) দান।” তো মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর পরিবারবর্গ তা থেকে শুধু জীবিকাই গ্রহণ করবেন (মালিক হতে পারবেন না)। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সময়কালে দানের যে নিয়ম চালু ছিল, তাতে আমি পরিবর্তন করব না। আর এতে আমি নিশ্চয়ই সে কাজ করবো, যা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে গিয়েছেন।’ তো হযরত আবূ বকর হযরত ফাতেমাকে তা থেকে কিছু প্রদান করতে (মীরাছ হিসেবে দিয়ে দিতে) অস্বীকার করলেন। ফলে হযরত ফাতেমা (রদিয়াল্লাহু আনহা) ক্ষুব্ধ হলেন এবং তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত (এ ব্যাপারে) তাঁর সঙ্গে আর কোন কথা বলেননি। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর ইন্তেকালের পর তিনি ছয় মাস জীবিত ছিলেন। এরপর যখন ইন্তিকাল করলেন, তখন তাঁর স্বামী আলী বিন আবূ তালিব (রদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁকে রাতেই দাফন করলেন এবং তাঁর মৃত্যু সংবাদ হযরত আবূ বকরকে জানালেন না। তাঁর নামাজে জানাযাও আলী (রদিয়াল্লাহু আনহু) পড়ালেন। তাঁর ফাতেমা (রদিয়াল্লাহু আনহু) এর জীবিতকাল পর্যন্ত আলী (রদিয়াল্লাহু আনহু) এর প্রতি জনগণের একটি বিশেষ মর্যাদাবোধ ছিল। এরপর যখন তাঁর ইন্তেকাল হলো, তখন আলী (রদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর প্রতি লোকজনের মনোভাবে পরিবর্তন দেখতে পেলেন। ফলে তিনি আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) এর সঙ্গে সমঝোতা করে তাকে বায়আত দিতে চাইলেন। ওই মাসগুলোতে তিনি তাকে বায়আত দেননি। তো হযরত আলী (রদিয়াল্লাহু আনহু) হযরত আবূ বকরের (রদিয়াল্লাহু আনহু) নিকট লোক পাঠিয়ে সংবাদ দিলেন যে, আপনি একাকী আমাদের এখানে আসুন। আপনার সাথে অন্য কাউকে আনাবেন না। কারণ, তিনি হযরত উমরের আগমনকে (গরম মেজাজের হওয়ায়) অপছন্দ করছিলেন। অন্যদিকে উমর (রদিয়াল্লাহু আনহু) আবূ বকরকে বললেন, আল্লাহর দোহাই! আপনি একাকী তাঁদের কাছে যাবেন না। আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, তারা আমার সাথে কি করবেন! আল্লাহর কসম! আমি তাদের কছে যাবই। তো আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁদের কাছে গেলেন। তখন হযরত আলী বিন আবূ তালেব (রদিয়াল্লাহু আনহু) তাশাহ্হুদ (তাওহীদ ও রেসালতের সাক্ষ্য) পাঠ করলেন। তারপর বললেন, ‘হে আবূ বকর! আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে সম্মান প্রদান করেছেন, তা আমরা জানি। আর আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে নিয়ামত (খিলাফত) প্রদান করেছেন, তাতে আমরা কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিনি। কিন্তু আপনি আমাদের উপর একচ্ছত্রতা استبداد দেখিয়েছেন। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর আত্মীয়তার কারণে আমরা মনে করতাম যে, (খিলাফতে) আমাদেরও একটু অধিকার আছে।’ তো তিনি (হযরত আলী) হযরত আবূ বকরের সঙ্গে অনেক্ষণ ধরে কথা বলতে থাকলেন। এক পর্যায়ে আবূ বকরের (রদিয়াল্লাহু আনহু) দুই চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হল। এরপর যখন আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) কথা বলতে শুরু করলেন, তখন তিনি বললেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর আত্মীয়দের অধিকার রক্ষা করা আমার কাছে আমার আত্মীয়দেও অধিকার রক্ষার চাইতে অধিক প্রিয়। তবে আমার এবং আপনাদের মধ্যে এই সম্পদ নিয়ে যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমি সঠিক অবস্থান থেকে সরে আসিনি এবং আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা যা করতে দেখেছি, তার কোনো বিষয় পরিত্যাগ করিনি; সবই আমল করেছি।’ এরপর হযরত আলী (রদিয়াল্লাহু আনহু) হযরত আবূ বকরকে (রদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘আমি আজ বিকাল বেলায় বায়আতের জন্য আপনাকে কথা দিলাম। তো যখন আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) জোহরের নামাজ শেষ করলেন, তখন তিনি মিম্বরে আরোহন করলেন এবং তাশাহ্হুদ (তাওহীদ ও রেসালতের সাক্ষ্য) পাঠ করলেন। এরপর তিনি আলী (রদিয়াল্লাহু আনহু) এর প্রসঙ্গ তুললেন এবং তাঁর বায়আত গ্রহণে বিলম্ব ও এ বিষয়ে তাঁর ওযর বর্ণনা করেন, যা তিনি (হযরত আলী) তাঁর (হযরত আবু বকরের) কাছে বর্ণনা করেছিলেন। এরপর তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অত:পর হযরত আলী (রদিয়াল্লাহু আনহু) তাশাহ্হুদ পাঠ করলেন এবং হযরত আবূ বকরের (রদিয়াল্লাহু আনহু) মহত্ত্ব বর্ণনা করলেন। আর বললেন, ‘তিনি যা করেছেন, তার কারণ হযরত আবূ বকরের (রদিয়াল্লাহু আনহু) সাথে ক্ষমতা নিয়ে প্রতিযোগিতা কিংবা আল্লাহ তাআলা তাকে যে সম্মান দিয়েছেন, তার প্রতি অস্বীকৃতি নয়; বরং আমরা মনে করতাম যে, শাসন ক্ষমতায় (খিলাফতের) মধ্যে আমাদেরও অংশ আছে। কিন্তু আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) আমাদের উপর একচ্ছত্রতা দেখিয়েছেন। এতে আমরা মনোক্ষুণœ হয়েছি।’ এ কথা শুনে মুসলিমগণ আনন্দিত হলেন এবং তাঁরা বললেন যে, আপনি ঠিকই করেছেন। তো যখন তিনি সঙ্গত বিষয়টি (বাইআত দেওয়া) বিবেচনায় আনলেন, তখন মুসলিমগণ আলীর (রদিয়াল্লাহু আনহু) সান্নিধ্যে আসতে লাগলেন। [ছহীহ বোখারী (৬৩৪৯) ও ছহীহ মুসলিম (১৭৫৮)]।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নবীগণ عليهم السلام মাছুম তথা নিস্পাপ হলেও বিশেষ মর্যাদার আহলে বাইতসহ ছাহাবা কেরামের কেউ তা নন। তারা হলেন মাগফূর (ক্ষমাপ্রাপ্ত)। হযরত আলী যদি বাইয়াত দিতে বিলম্ব করে কিংবা হযরত আবু বকর বা তার কন্যা হযরত আয়েশা যদি আহলে বাইতের প্রতি সম্মান দেখাতে কার্পণ্য করে কোনো ত্রুটি করেন, সেটি ক্ষমাযোগ্য। কারণ, তারা উভয়ের সততা ও ফজীলত কোরআন ও ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। আর হযরত আয়েশা আবূ এজীদের পক্ষাবলম্বন করে যে ভুল করেছেন, তার জন্য তিনি জীবনের শেষদিকে অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং যখন আবূ এজীদ তার ছেলে এজীদকে তার স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন তিনি এবং তাঁর ভাই হযরত আবদুর রহমান বিন আবূ বকর (রজিঃ) সে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পরে আবূ এজিদের মদীনার গভর্ণর মরওয়ানের ভয়ে হযরত আবদুর রহমান বিন আবূ বকর মক্কায় চলে যান এবং সেখানে পৌঁছার একটু আগে ইন্তেকাল করেন। হযরত আয়েশা এতে মর্মাহত হন এবং তার কবর জেয়ারত করতে যান। অত:পর তিনিও কিছুদিন পর ইন্তেকাল করেন। শিয়াদের অনেকে দাবি করে, আবূ এজিদের মদীনার গভর্ণর মরওয়ানই হযরত আয়েশাকে খুন করেন। কারণ, জীবনের শেষের দিকে আবূ এজিদের প্রতি হযরত আয়েশার অনুরাগ বিরাগে পরিণত হয়েছিল। আর আমার জানামতে সালাফীদের অনেকের মাঝে নাছেবী চিন্তা প্রকট ভাবে স্থান করে নিলেও মরহুম নাছিরুদ্দীন আলবানীর মাঝে তা ছিল না। তিনি মুমিনদের মওলা হযরত আলীর ফজীলতের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন।
ফাই নিয়ে বিরোধ ও তার সুন্দর সমাপ্তি নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে আসুন ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত আরেকটি হাদীছেঃ
عن مَالِكُ بْنُ أَوْسِ بْنِ الْحَدَثَانِ النَّصْرِيُّ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ -رضى الله عنه- دَعَاهُ إِذْ جَاءَهُ حَاجِبُهُ يَرْفَا فَقَالَ هَلْ لَكَ فِي عُثْمَانَ، وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالزُّبَيْرِ وَسَعْدٍ يَسْتَأْذِنُونَ فَقَالَ نَعَمْ، فَأَدْخِلْهُمْ. فَلَبِثَ قَلِيلاً، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ هَلْ لَكَ فِي عَبَّاسٍ وَعَلِيٍّ يَسْتَأْذِنَانِ قَالَ نَعَمْ. فَلَمَّا دَخَلاَ قَالَ عَبَّاسٌ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، اقْضِ بَيْنِي وَبَيْنَ هَذَا، وَهُمَا يَخْتَصِمَانِ فِي الَّذِي أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ بَنِي النَّضِيرِ، فَاسْتَبَّ عَلِيٌّ وَعَبَّاسٌ، فَقَالَ الرَّهْطُ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، اقْضِ بَيْنَهُمَا وَأَرِحْ أَحَدَهُمَا مِنَ الآخَرِ. فَقَالَ عُمَرُ اتَّئِدُوا، أنْشدُكُمْ بِاللَّهِ الَّذِي بِإِذْنِهِ تَقُومُ السَّمَاءُ وَالأَرْضُ، هَلْ تَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” لاَ نُورَثُ، مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ ”. يُرِيدُ بِذَلِكَ نَفْسَهُ. قَالُوا قَدْ قَالَ ذَلِكَ. فَأَقْبَلَ عُمَرُ عَلَى عَبَّاسٍ وَعَلِيٍّ فَقَالَ أَنْشُدُكُمَا بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمَانِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ قَالَ ذَلِكَ قَالاَ نَعَمْ. قَالَ فَإِنِّي أُحَدِّثُكُمْ عَنْ هَذَا الأَمْرِ، إِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ كَانَ خَصَّ رَسُولَهُ صلى الله عليه وسلم فِي هَذَا الْفَىْءِ بِشَىْءٍ لَمْ يُعْطِهِ أَحَدًا غَيْرَهُ فَقَالَ جَلَّ ذِكْرُهُ {وَمَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَلاَ رِكَابٍ} إِلَى قَوْلِهِ {قَدِيرٌ} فَكَانَتْ هَذِهِ خَالِصَةً لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ وَاللَّهِ مَا احْتَازَهَا دُونَكُمْ، وَلاَ اسْتَأْثَرَهَا عَلَيْكُمْ، لَقَدْ أَعْطَاكُمُوهَا وَقَسَمَهَا فِيكُمْ، حَتَّى بَقِيَ هَذَا الْمَالُ مِنْهَا، فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُنْفِقُ عَلَى أَهْلِهِ نَفَقَةَ سَنَتِهِمْ مِنْ هَذَا الْمَالِ، ثُمَّ يَأْخُذُ مَا بَقِيَ فَيَجْعَلُهُ مَجْعَلَ مَالِ اللَّهِ، فَعَمِلَ ذَلِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَيَاتَهُ، ثُمَّ تُوُفِّيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ فَأَنَا وَلِيُّ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم. فَقَبَضَهُ أَبُو بَكْرٍ، فَعَمِلَ فِيهِ بِمَا عَمِلَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنْتُمْ حِينَئِذٍ. فَأَقْبَلَ عَلَى عَلِيٍّ وَعَبَّاسٍ وَقَالَ تَذْكُرَانِ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ عَمِلَ فِيهِ كَمَا تَقُولاَنِ، وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّهُ فِيهِ لَصَادِقٌ بَارٌّ رَاشِدٌ تَابِعٌ لِلْحَقِّ ثُمَّ تَوَفَّى اللَّهُ أَبَا بَكْرٍ فَقُلْتُ أَنَا وَلِيُّ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ. فَقَبَضْتُهُ سَنَتَيْنِ مِنْ إِمَارَتِي أَعْمَلُ فِيهِ بِمَا عَمِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ، وَاللَّهُ يَعْلَمُ أَنِّي فِيهِ صَادِقٌ بَارٌّ رَاشِدٌ تَابِعٌ لِلْحَقِّ، ثُمَّ جِئْتُمَانِي كِلاَكُمَا وَكَلِمَتُكُمَا وَاحِدَةٌ وَأَمْرُكُمَا جَمِيعٌ، فَجِئْتَنِي ـ يَعْنِي عَبَّاسًا ـ فَقُلْتُ لَكُمَا إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” لاَ نُورَثُ، مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ ”. فَلَمَّا بَدَا لِي أَنْ أَدْفَعَهُ إِلَيْكُمَا قُلْتُ إِنْ شِئْتُمَا دَفَعْتُهُ إِلَيْكُمَا عَلَى أَنَّ عَلَيْكُمَا عَهْدَ اللَّهِ وَمِيثَاقَهُ لَتَعْمَلاَنِ فِيهِ بِمَا عَمِلَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ، وَمَا عَمِلْتُ فِيهِ مُذْ وَلِيتُ، وَإِلاَّ فَلاَ تُكَلِّمَانِي، فَقُلْتُمَا ادْفَعْهُ إِلَيْنَا بِذَلِكَ. فَدَفَعْتُهُ إِلَيْكُمَا، أَفَتَلْتَمِسَانِ مِنِّي قَضَاءً غَيْرَ ذَلِكَ فَوَاللَّهِ الَّذِي بِإِذْنِهِ تَقُومُ السَّمَاءُ وَالأَرْضُ لاَ أَقْضِي فِيهِ بِقَضَاءٍ غَيْرِ ذَلِكَ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ، فَإِنْ عَجَزْتُمَا عَنْهُ، فَادْفَعَا إِلَىَّ فَأَنَا أَكْفِيكُمَاهُ. قَالَ فَحَدَّثْتُ هَذَا الْحَدِيثَ، عُرْوَةَ بْنَ الزُّبَيْرِ فَقَالَ صَدَقَ مَالِكُ بْنُ أَوْسٍ، أَنَا سَمِعْتُ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم تَقُولُ أَرْسَلَ أَزْوَاجُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عُثْمَانَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ يَسْأَلْنَهُ ثُمُنَهُنَّ مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم، فَكُنْتُ أَنَا أَرُدُّهُنَّ، فَقُلْتُ لَهُنَّ أَلاَ تَتَّقِينَ اللَّهَ، أَلَمْ تَعْلَمْنَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ ” لاَ نُورَثُ، مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ ـ يُرِيدُ بِذَلِكَ نَفْسَهُ ـ إِنَّمَا يَأْكُلُ آلُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم فِي هَذَا الْمَالِ ”. فَانْتَهَى أَزْوَاجُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَى مَا أَخْبَرَتْهُنَّ. قَالَ فَكَانَتْ هَذِهِ الصَّدَقَةُ بِيَدِ عَلِيٍّ، مَنَعَهَا عَلِيٌّ عَبَّاسًا فَغَلَبَهُ عَلَيْهَا، ثُمَّ كَانَ بِيَدِ حَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ، ثُمَّ بِيَدِ حُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ، ثُمَّ بِيَدِ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ وَحَسَنِ بْنِ حَسَنٍ، كِلاَهُمَا كَانَا يَتَدَاوَلاَنِهَا، ثُمَّ بِيَدِ زَيْدِ بْنِ حَسَنٍ، وَهىَ صَدَقَةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَقًّا. أخرجه البخارى (6/2474 ، رقم 6347) ، ومسلم (3/1377 ، رقم 1757) ، وأبو داود (3/139 ، رقم 2963) ، والترمذى (4/158 ، رقم 1610) وقال : حسن صحيح غريب .
অর্থ: হযরত মালিক বিন আওস বিন হাদাছান আন-নাছরী (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, (একদা) হযরত উমর ইবনুল খত্তাব (রদিয়াল্লাহু আনহু) তাকে ডাকলেন। ওই সময় তাঁর দ্বাররক্ষী (পিয়ন) ইয়ারফা এসে বলল, উসমান, আবদুর রহমান, যুবাইর এবং সা’দ (রদিয়াল্লাহু আনহুম) আপনার নিকট আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁদেরকে আসতে বলো। কিছুক্ষণ পরে সে আবার এসে বলল, আব্বাস এবং আলী (রদিয়াল্লাহু আনহুমা) আপনার নিকট অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ আসতে বলো। তাঁরা উভয়েই ভিতরে প্রবেশ করলেন। আব্বাস (রদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘হে আমীরুল মুমিনীন! আমার এবং তার মাঝে (চলমান বিবাদের) মীমাংসা করে দিন।’ কারণ, বনূ নাযীরের সম্পদ থেকে আল্লাহ তাঁর রসূলকে (ছল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে ফাই দিয়েছিলেন, তা নিয়ে তাদের উভয়ের মাঝে বিবাদ চলছিল। এ নিয়ে তাঁরা আক্রমণাত্মক তর্কে লিপ্ত হলেন (চাচা আব্বাস ভাতিজা আলীকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন)। (এ অবস্থা দেখে আগত) দলের সকলেই বললেন, ‘হে আমীরুল মু’মিনীন! তাদের মাঝে একটি ফয়সালা করে তাদেরকে এ পারস্পরিক বিবাদ থেকে মুক্তি দিন।’ তখন উমর (রদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘তাড়াহুড়া করবেন না। যে আল্লাহর আদেশে আসমান ও যমিন স্থির আছে, আমি আপনাদেরকে তাঁর নামে শপথ দিয়ে বলছি, আপনারা কি জানেন যে, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সম্বন্ধে বলেছেন, لاَ نُورَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ “আমরা (নবীগণ) কাউকে সম্পদের উত্তরাধিকারী করে যাইনা। যা রেখে যাই তা (বাইতুল মালে) দান হিসাবেই গন্য হয়।”’ উপস্থিত সকলেই বললেন, হ্যাঁ, তিনি একথা বলেছেন। অত:পর হযরত উমর হযরত আলী ও আব্বাসকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে একথা বলেছেন, আপনারা তা জানেন কি?’ তাঁরা উভয়েই বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি (উমর) বললেন, ‘এখন আমি আপনাদেরকে (উত্থাপিত) বিষয়টির প্রকৃত অবস্থা খুলে বলছি। আল্লাহ তাআলা ফাইয়ে তাঁর রসূলের জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তা তিনি অন্য কাউকে দেননি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আল্লাহ ইয়াহুদীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যে ফাই দিয়েছেন, তাঁর জন্য তোমরা অশ্বে কিংবা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি; আল্লাহ তো তাঁর রসূলকে যার উপর ইচ্ছা তার উপর কর্তৃত্ব দান করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।” তো এ ফাই রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর জন্যই নির্দ্দিষ্ট ছিল। আল্লাহর কসম! এরপর তিনি তোমাদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য এ সম্পদকে সংরক্ষিতও রাখেননি এবং তোমাদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজের জন্যও নির্ধারিত করে যাননি। বরং এ অর্থকে তিনি তোমাদের মাঝে (প্রয়োজন মত) বন্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে এ মাল উদ্বৃত্ত আছে। এ মাল থেকে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবার পরিজনকে প্রতিবার এক বছরের জন্য খোরপোশ দিতেন। আর যা অবশিষ্ট থাকত, তাকে তিনি আল্লাহর মাল হিসেবে নির্দ্দিষ্ট করতেন (ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যাণে খরচ করে দিতেন)। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় এরকমই করেছেন। অত:পর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর ইন্তেকালের পর আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, এখন থেকে আমিই হলাম রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর স্থলাভিষিক্ত। এরপর আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) তা স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নিয়ম অনুসারে কাজ করেছিলেন, সে নীতি অনুসারেই কাজ করেছেন।’ এ সময় তিনি (হযরত উমর) হযরত আলী ও আব্বাসের প্রতি পুনরায় লক্ষ্য করে বললেন, ‘আজ আপনারা যা বলেছেন, এ বিষয়ে আপনারা আবূ বকরের সাথেও একই ধরণের আলোচনা করেছিলেন। আল্লাহ নিশ্চয় জানেন, এ বিষয়ে আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ, সঠিক এবং সত্যের অনুসরণকারী। এরপর আবূ বকরের ইন্তেকাল হলে (শূরা সদস্যদের সিদ্ধান্তে) আমি বললাম, (আজ থেকে) আমিই হলাম রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকরের স্থলাভিষিক্ত। এরপর এ সম্পদকে আমি আমার খিলাফতের দুই বছরকাল আমার তত্ত্বাবধানে রেখেছি এবং এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকরের আনুসৃত নীতই আনুসরণ করে চলছি। আল্লাহ নিশ্চয় জানেন, এ বিষয়ে আমি সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ, সঠিক এবং সত্যের অনুসরণকারী। তা সত্ত্বেও আপনারা দুইজনই পুনরায় আমার নিকট এসেছেন। আপনাদের কথা এবং আপনাদের ব্যাপারটি এক। আর হে আব্বাস, আপনিও এখন এসেছেন। আমি আপনাদের উভয়কেই বলেছিলাম, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমরা (নবীগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী করি না, আমরা যা রেখে যাই তা দান/ছদকা হিসাবেই গণ্য হয়।” এরপর এ সম্পদটি আপনাদের উভয়ের তত্ত্বাবধানে দেওয়ার বিষয়টি যখন আমার নিকট স্পষ্ট হল, তখন আমি বলেছিলাম, যদি আপনারা চান তাহলে একটি শর্তে তা আমি আপনাদের নিকট অর্পণ করব। শর্তটি হচ্ছে, আপনারা আল্লাহর সাথে এ অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হবেন যে, তাতে আপনারা এমনভাবে কাজ করবেন, যেভাবে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর করেছেন এবং আমার তত্ত্বাবধানে আসার পর যেমনভাবে আমি করেছি। অন্যথায় এ বিষয়ে আমার সাথে আর কোন আলোচনা করবেন না। তখন আপনারা বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের নিকট অর্পণ করুন। ফলে তা আমি তা আপনাদের হাতে অর্পণ করেছি। তো এখন আপনারা আমার নিকট অন্য কোন ফয়সালা কামনা করেন কি? যে আল্লাহর নির্দেশে আসমান ও যমীন স্থির আছে, আমি তাঁর শপথ করে বলছি, কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত আমি এর বাইরে অন্য কোন ফয়সালা দিতে পারব না। আপনারা যদি এ দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে থাকেন, তাহলে আমার নিকট ফিরিয়ে দিন। এ দায়িত্ব পালনে আমিই যথেষ্ট।’ বর্ণনাকারী (যুহরী) বলেন, আমি হাদিসটি উরওয়া বিন যুবাইরের নকিট বর্ণনা করার পর তিনি (আমাকে) বললেন, মালিক বিন আওস ঠিকই বর্ণনা করেছেন। আমি নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সহধর্মিণী আয়েশাকে (রদিয়াল্লাহু আনহা) বলতে শুনেছি, ‘ফাই হিসাবে আল্লাহ তাঁর রসূলকে যে সম্পদ দিয়েছেন, তার অষ্টমাংশ আনার জন্য নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সহধর্মিণীগণ হযরত উসমানকে হযরত আবূ বকরের নিকট পাঠাতে ইচ্ছা করলে আমি এই বলে তাদেরকে বারণ করছিলাম যে, আপনারা কি আল্লাহকে ভয় করেন না? আপনারা কি জানেন না যে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ব্যাপারে বলতেন, “আমরা (নবীগণ) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না, আমরা যা রেখে যাই, তা দান হিসাবেই গণ্য হয়।” তো এ সম্পদ থেকে মুহাম্মদের (ছল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পরিবারভূক্তরা শুধু (প্রয়োজন অনুযায়ী) খেতে পারবেন (মালিক হতে পারবেন না)। আমার এ কথা শুনে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সহধর্মিণীগণ বিরত হলেন।’ বর্ণনাকারী (উরওয়া বিন যুবাইর) বলেন, অবশেষে এ মালে ফাই হযরত আলীর তত্ত্বাবধানে ছিল। তিনি আব্বাসকে তা থেকে (রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নীতি বহির্ভূত ভাবে) দিতে অস্বীকার করেন এবং এর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠ বণ্ঠনে তিনি আব্বাসের উপর জয়ী হলেন। এরপর তা যথাক্রমে নবীপৌত্র হযরত হাসান ও হুসাইনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাদের তা আলী বিন হুসাইন ও হাসান বিন হাসানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তাঁরা উভয়ই পালাক্রমে তার দেখাশোনা করতেন। এরপর তা যায়েদ বিন হাসানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। প্রকৃত অর্থেই তা ছিল রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর দান/ছদকা।” [ছহীহ বোখারী (৬৩৪৭) ও ছহীহ মুসলিম (১৭৫৭)]।
এ পর্যায়ে আমি বলবো, শিয়াদের জানা উচিত, হযরত আবু বকর শুধু হযরত ফাতেমাকে পিতার মীরাছ দিতে অস্বীকার করেননি; তাঁর নিজের মেয়ে আয়েশাসহ নবীজির صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ অন্য স্ত্রীদেরকেও স্বামীর মীরাছ দেননি। আর এ না দেওয়ার কারণ ছিল প্রিয় নবীজির صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ প্রতি তাঁর অপরিসীম ভক্তি ও শ্রদ্ধা। একই অবস্থা ছিল হযরত উমরেরও। এতে নবীকন্যার প্রতি তার বিন্দুমাত্র বিরাগ/বিদ্বেষ ছিল না। সংশ্লিষ্ট হাদীছটি আগে থেকে না শোনার কারণে হযরত ফাতেমা প্রথমে হযরত আবু বকরের প্রতি রাগ করলেও পরে তিনি স্বাভাবিক হয়ে যান। শিয়া-সুন্নীসহ সকল মুসলিমের জানা উচিত, অতিভক্তি চোরের লক্ষণ। ইসলাম বা হককে নিজের দল/সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে চাওয়া অজ্ঞতা, অহমিকা ও মনের সঙ্কীর্ণতার شُح النفس লক্ষণ।
শিয়া বন্ধুরা হযরত ফাতেমা আলাইহাস সালাম কিভাবে ইন্তেকাল করেছেন, তা শুনুনঃ
عن عائشة قَالَتْ دَعَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَاطِمَةَ ابْنَتَهُ فِي شَكْوَاهُ الَّذِي قُبِضَ فِيهَا، فَسَارَّهَا بِشَىْءٍ فَبَكَتْ، ثُمَّ دَعَاهَا فَسَارَّهَا فَضَحِكَتْ، قَالَتْ فَسَأَلْتُهَا عَنْ ذَلِكَ. فَقَالَتْ سَارَّنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُقْبَضُ فِي وَجَعِهِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ فَبَكَيْتُ، ثُمَّ سَارَّنِي فَأَخْبَرَنِي أَنِّي أَوَّلُ أَهْلِ بَيْتِهِ أَتْبَعُهُ فَضَحِكْتُ. أخرجه البخاري (رقم 3427).
অর্থ: হযরত আয়েশা (রদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, “নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অসুস্থতায় ওফাত লাভ করেছেন, সে অসুস্থতার সময় তাঁর কন্যা ফাতেমাকে ডেকে আনলেন এবং তাঁর সাথে চুপেচুপে কিছু বললেন। এতে ফাতেমা (রদিয়াল্লাহু আনহা) কেঁদে দিলেন। এরপর তিনি আবার কাছে ডেকে এনে তার সাথে চুপেচুপে কিছু বললেন। এতে তিনি হেসে দিলেন। আয়েশা (রদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি এ ব্যাপারে ফাতেমাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (প্রথমে) চুপেচুপে জানালেন যে, তিনি এ অসুস্থতায় ওফাত লাভ করবেন। এতে আমি কেঁদেছিলাম। তারপর আবার আমাকে চুপেচুপে জানালেন যে, তাঁর পরিবার-পরিজনের মধ্যে আমিই সবার আগে তাঁর সাথে মিলিত হব। এতে আমি হেসে ছিলাম।” [ছহীহ বোখারী (৩৪২৭)]।
عن محمد بن عمر بن علي عن أبيه عن علي بن الحسين عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال: قد مرضت فاطمة مرضا شديدا فقالت لأسماء بنت عميس ألا ترين إلى ما بلغت أحمل على السرير ظاهرا فقالت أسماء ألا لعمري ولكن أصنع لك نعشا كما رأيت يصنع بأرض الحبشة قالت فأرنيه قال فأرسلت أسماء إلى جرائد رطبة فقطعت من الأسواق وجعلت على السرير نعشا وهو أول ما كان النعش فتبسمت فاطمة وما رأيتها متبسمة بعد أبيها إلا يومئذ ثم حملناها ودفناها ليلا. أخرجه الحاكم (رقم 4763).
অর্থ: হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, ‘হযরত ফাতেমা খুবই অসুস্থ হলেন। ওই সময় তিনি আসমা বিনতে উমাইসকে বললেন, আপনি কি আমার অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন না। আমাকেতো খাটে উঠানো হয়েছে। আসমা বললেন, হ্যাঁ, অবশ্য। তবে আমি আপনার জন্য হাবশায় যেরকম দেখেছি, সেরকমই একটি কফিন (লাশ রাখার পাত্র) তৈরি করবো। হযরত ফাতেমা বললেন, তাহলে আমাকে দেখান। তখন আসমা খেজুরের কিছু কাঁচা ডাল আনাতে লোক পাঠালেন। আনা হলে তিনি সেগুলোকে কান্ড থেকে কেটে খাটের উপর একটি কফিন বানালেন। আর এটিই ছিল মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত প্রথম কফিন। তো ওটা দেখে হযরত ফাতেমা মৃদু হাসলেন। তাঁর পিতার ওফাতের পর আমি তাকে ওইদিন ছাড়া আর হাসতে দেখিনি। অত:পর তিনি ইন্তেকাল করলে আমরা তাকে কাঁেধ উঠালাম এবং রাতেই দাফন করলাম।’ [মুস্তাদরকে হাকেম (৪৭৬৩)]।
শিয়া বা সুন্নী বা অন্যকোনো সম্প্রদায়ের কোন মুসলিম যদি সুস্থ চিন্তা ও মধ্যপন্থা থেকে সরে অসুস্থ ও উগ্রচিন্তার শিকার হয়, তাহলে মঙ্গলকামী হৃদয় নিয়ে তার বিভ্রান্তি দূরীকরণের চেষ্টা করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। হেদায়তের মালিক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নন। পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করতে হবে চোখ-কান খোলা রেখে। তাদের মাঝেও খারাপ লোক ছিল। শিয়াদের যেসব কিতাবে উগ্রতা ও বিদ্বেষপূর্ণ কথা রয়েছে, সেগুলো অন্ধভাবে বিশ্বাস করা থেকে সত্য অনুসন্ধানী শিয়াদের বিরত থাকা উচিত। আর আপনারা যারা তাকফীরি শিয়া, তারা ভাববেন না যে, ইসলাম শুধু আপনারাই বুঝেছেন এবং আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা শুধু আপনাদের মাঝেই আছে। হযরত আলী হযরত আবু বকর ও হযরত উমরকে বিরোধকালীন সময়েও যেখানে গালি দেননি, সেখানে উভয় পক্ষের সমঝোতার পরও আপনারা কোন্ মুখে তাদেরকে গালি দেন? আমি নিশ্চিত, মওলাল মুমিনীন হযরত আলী আপনাদের মত উগ্র ভক্তদের পেলে উপযুক্ত উত্তম-মাধ্যম দিতেন। আপনারা হযরত আবু বকর ও হযরত উমরকে গালি দিয়ে মূলত সে ভুলই করছেন, যেটি হযরত আলীকে গালি দিয়ে খারেজীরা করেছে। আর আপনাদের মধ্যে যারা খুন-গুমে বিশ্বাসী, তাদের আর হযরত আলীর ঘাতক খারেজী বা এ যুগের আইএসের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি না।
আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা সুন্নী-শিয়া সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং উগ্র ও হঠকারী চিন্তা থেকে দূরে রাখুন।
আবুল হুসাইন আলেগাজী
২৬.০২.২০১৭, রবিবার
নোটিশ: আপনি কি ব্লগ কিংবা ফেসবুকে ইসলাম এবং সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতে আগ্রহী? তাহলে আপনার লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে।বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। ধন্যবাদ Fb.com/MaqamaeIbrahim
Copyright©2017: IslaameraloII Design By:F.A.CREATIVE FIRM