চোখ
[রুকন রাশনান লুবান]
চক্ষু, চোখ, লোচন, নয়ন, নেত্র, অক্ষি, আঁখি। প্রতিশব্দ আর কি। আরবিতে বলে আইনুন। আরবি আইনুন এর একশত অর্থ আছে। আবার চোখের আরবিও আনলিমিটেড।
হিন্দিতে আঁখ ও নাইন বেশি ব্যবহার হয়। তেরে মাস্ত মাস্ত দুনাইন, মেরে দিলকে লেগেয়ে চাইন। প্রসিদ্ধ গানের কলি। ইংরেজরা বলে আই। ফার্সিতে বলে চশমো। আবার উর্দুুতে চশমা মানে ঝর্না। বাংলায় চশমা চোখের গ্লাসকে বলা হয়। ভাষার কারিকুরি অদ্ভুত, আবার মজাদারও। জাপানি ভাষায় চোখকে মে বলে। চায়নিজরা চোখকে বলে, ইয়েনজিঙ। ফরাসি ভাষায় চোখকে লই বলে।
জার্মানরা কী বলে জানেন? ডাস আউগা। ইতালিয়ানরা বলে, লোকিউ। আর বিরক্ত করছি না।
চোখের কাজ কী? মানবদেহের পরিচালনা করে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কে তথ্য সরবরাহ করে অনেক সেন্টার। তার মাঝে চোখ অন্যতম। চোখ দেখে, বহুদূর পর্যন্ত অবজারভ করে মস্তিষ্কের কাছে তথ্য পৌঁছায়। চারপাশের দৃশ্যাবলী চোখের সহায়তায় মস্তিষ্কে দৃশ্যকরণ করে তথ্য পাঠায়। মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চোখের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।
ডিএইসএলআর এর সক্ষমতা কতো ফিক্সেল? আমাদের চোখের পরিষ্কার সক্ষমতা পাঁচশতো ছিয়াত্তর মেগাপিক্সেল। উন্নত ক্যামেরা আঁধার রাতের ছবি ক্লিয়ার করতে পারে না। আপনি কিন্তু অন্ধকারে পরিষ্কার না হলেও বোধগম্য চিত্র দেখতে পারেন। এটাই সুপারপাওয়ার চোখের কারিশমা।
চোখের আরেক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, চোখে ঘুম নামে। ঘুমের মাধ্যমে আমরা ক্লান্তি কাটিয়ে সজীবতায় ফিরি।
জান্নাতে ঘুম থাকবে না। চোখ বড় করার কিছু নেই। জান্নাতে শ্রান্তি ক্লেশ থাকবে না। ঘুমের দরকার নেই। তবু, আপনার ঘুমের খায়েশ হলে, আয়েশ করে ঘুমুতে পারবেন।
চোখে যথাযথ ঘুম না হলে, শরীর অস্বাভাবিক হয়। চেহারা, শরীর ও মন তছনছ হয়ে যায়। চোখের কোলে কালি জমে। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়।
চোখের আরেক বৈশিষ্ট্য, চোখ কাঁদে। আমাদের মন বিষণ্ণ ও বিধ্বস্ত হলে, চোখে অশ্রু নামে।
যদি চোখের অশ্রু ব্যবস্থাপনা না থাকত, মানুষ দুঃখে মরে যেত। আল্লাহ না করুন, সুইসাইড ছাড়া গত্যন্তর থাকত না। কিছু কিছু কষ্টের প্রশমন অশ্রু ছাড়া সম্ভবপর নয়।
চোখের জলজ ব্যবহার আমাদের মনকে হালকা করে। আল্লাহর কাছে পাপবোধের অশ্রু বেশি মূল্যবান।
তাওবার আঁসু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির পরিপুষ্ট কমল।
এক প্রিয় মানুষের ভাবনা, যে চোখ কাঁদে না, তা কম সুন্দর। আসলেই, অশ্রু চোখ ধুয়ে দিলে, বর্ষা ধোয়া সবুজাভ পত্রের মতো লাগে নেত্রপল্লব।
চোখ মানবদেহের অন্যতম সুন্দর অঙ্গ। পৃথিবীর সকল সাহিত্যে চোখের বিপুলকায় বর্ণনার ছড়াছড়ি।
চোখের তারা, ভ্রু, পাপড়ি ও পাতার সৌন্দর্যরূপ বিশ্লেষণ করতে করতে সাহিত্যিকগণ ক্লান্ত। তবু, চোখের সুষমাময় ব্যাখ্যা শেষ হয় না।
এমনো ত প্রেম হয়/ চোখের জলে কথা কয়। পরিচিত গান। চোখ যে মনের কথা বলে…..
খ্যাত গীতি। বলা হয়, মুখের কথার চেয়ে চোখের কথা গভীরতর।
চোখের সৌন্দর্যের সাথে সাথে চোখের ভাষা আছে। এ ভাষা বেশ সমৃদ্ধ। মুখের ভাষার চেয়ে শক্তিশালী। কিছুটা জটিলও বটে।
চোখের চাহনি, ইশারা ও উঠানামায় ব্যাপক অর্থ থাকে।
মুখের ভাষা সুসংগঠিত। চোখের ভাষা বৃষ্টির মতো এলোমেলো। চোখের ভাষা বুঝতে ও বুঝাতে মানুষ হরদম ভুল করে।
চোখের টিপ ও প্রদীপে কেউ পথ হারায়, কেউ পথ পায়।
ফার্সিতে প্রবাদ আছে, শাইখের সুনেত্রে শিষ্যের পাথেয় হয়ে যায়।
চোখের ভাষা এতো ব্যাপক, অভিধান তা সংকুলান করতে পারে না।
চোখের কারকুন জানা নারীর কৌশলজালে কতো পুরুষ বিলীন হয়েছে, জানা নেই। পুরুষও কম যান না। চোখের ভাষায় পারদর্শী পুরুষ নারীকুল কাত করতে পারঙ্গম।
আই কন্টাক্ট খুবি গুরুত্বপূর্ণ। গোয়েন্দারা মুখের ভাষার চেয়ে চোখের কথা বেশি লক্ষ্য করেন।
মুখে মিছা বলা সহজ, চোখের ভাষায় মিছার মিশ্রণ কঠিন। কারো ভাষার সঠিকতা বুঝতে চাইলে, চোখে চোখ রাখুন।
মানুষ চোখে চোখ রেখে মিথ্যা বলতে পারে না। কম পারে। মিথ্যুকরা চোখ আড়াল করে বা চোখ বন্ধ করে কথাবার্তা বলতে চেষ্টা করে।
রাসুল আলাইহিস সালাম চোখে চোখ রেখে সজীব ও সহজ করে কথা বলতেন। এটা সুন্নত।
চোখের মাঝ দিয়ে আমরা আল্লাহকে চিনি, বুঝি ও ভাবি।
কুরআন বারবার প্রকৃতির ব্যবস্থাপনা দেখে শিক্ষা নিতে বলেছে। আল্লাহর সৃষ্টির অপার সৌন্দর্য হতে আমরা চোখের দৃষ্টিপট ব্যবহার করে, আল্লাহর কুদরত উপলব্ধি করি।
চোখের মাধ্যমে সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখার কথা যেমন কুরআন মজিদ বলেছে, তেমনি চোখকে নাজায়েজ ও ক্ষতিকর বিষয় হতে সরিয়ে রাখার কথাও কুরআন বলেছে। শরীয়তের পর্দার মূলকথাই ফিতনা ও সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিগন্ত হতে চোখের হেফাজত।
মানুষ একসময় ভাবত, চোখের বিকিরণ বস্তুতে গেলে, বস্তু দৃশ্যমান হয়।
মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনু হাইশাম এসে এই ভ্রান্তি দূর করলেন। তিনি চশমার উদ্ভাবক। আমাদের চোখে বস্তুর আলো এসে পড়লে, আমরা তা দেখি। তাহলে, অন্ধত্ব কী? বস্তুর আলো গ্রহণ করার অক্ষমতা। এজন্য আকাশপটে তারা যখন দেখি, তা মিনিমাম পাঁচ মিনিট আগের তারা। কারণ, কমপক্ষে পাঁচ মিনিট লাগে, তারার আলো চোখের তারায় এসে পড়তে। বহু তারার আলো আজও পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় নি। নীহারিকাপুঞ্জ বহু সুদূরে অবস্থিত।
চোখের ভাষার ব্যবহারে সমঝদার হওয়া উচিত। চোখে সংযম ও সম্ভ্রম রাখা ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য। চোখের অপব্যবহার মানুষের ভেতরবাহির নষ্ট করে দিতে পারে। কিছু কিছু চোখ গোলাবের মতো পবিত্র, লাজুকলতার মতো সলাজ। কিছু চোখ বেহায়া ও বীতশ্রদ্ধ।
আমাদের চোখের পট ও দৃষ্টিছক কুরআনিক বিভায় কাজলা হোক। এটা চেষ্টা করা উচিত।
চেহারার সৌন্দর্যের এক আজব কারিগর চোখ। ডাগর চোখে ভ্রমর ভ্রু হলে দেখতে ভালো লাগে।
চোখ সুন্দর মানুষের কান্না পর্যন্ত সুন্দর। তারা হাসলে চোখের চৌপাড় হেসে কুটিকুটি হয়।
চোখ মানুষকে বুঝার বিশেষ শাখা। কোন অনুবাদক লাগবে না, আপনি চায়নিজ ও পর্তুগিজ জানা ছাড়া কারো চোখের দিকে গভীরভাবে তাকালে, তার অবস্থা বুঝতে সক্ষম হবেন।
পিতামাতা চোখের দিকে তাকিয়ে সন্তানের সুখদুঃখ বুঝে ফেলে।
এখন ত চোখের ফ্যাশন ও প্যাশন নিয়ে দস্তুরমতো খামারবাড়ি গড়ে উঠেছে। কতো আয়োজনরে বাবা!
আমাদের প্রিয় নবীজি আলাইহিস সালাম চোখে সুরমা দিতেন। এটা সুন্নত। ভ্রূ কাটাকাটি অপছন্দনীয় কাজ। নারীর সাজসজ্জা শরীয়তের পার্টনারের জন্য হলে, সওয়াব, অন্যথায় জাহান্নামের লাকড়ি।
পৃথিবীর সৃষ্টির সুন্
নোটিশ: আপনি কি ব্লগ কিংবা ফেসবুকে ইসলাম এবং সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতে আগ্রহী? তাহলে আপনার লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে।বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমাদের ফেসবুক পেজে মেসেজ দিন। ধন্যবাদ Fb.com/MaqamaeIbrahim
Copyright©2017: IslaameraloII Design By:F.A.CREATIVE FIRM